নিওরিয়্যালিজমের ঠাস বুনোনে তৈরী 'নিরন্তর' প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মুকুটে নতুন পালক
যে কোনও সিনেমা দেখতে দেখতে হাফটাইমের মধ্যেই আজকাল ক্রমে একটা ধারনা করে
ফেলি বা জাজমেন্টাল হয়ে পড়ি আমরা যেমন - ওই তো হিরো আসবে, যতই বাধা
আসুক ঠিক মিল হয়ে যাবে, কিম্বা হয় ওঁদের বিয়ে হবে নইলে ব্রেক আপ এর বেশি
কিছু না। অথবা গোয়েন্দা গল্পের জন্য সবচেয়ে নীরিহ এবং একেবারে আউট অফ দ্য
সিন্ লোকটাই আসল ক্রিমিনাল।
কিন্তু একটা ড্রামা জনারের সিনেমায়
পেঁয়াজের খোসার মত প্রত্যেক সিন্-এ গল্প নতুন মোড় নেয় - এরকম উদাহরণ খুবই
বিরল। আর ঠিক সেই কারণেই ড্রামা জনারের হলেও 'নিরন্তর' আমাদের টানটান করে
রাখে একদম শেষ পর্যন্ত।কিছু মুহুর্ত, কিছু গল্প, কিছু মনে রাখার মত ডায়লগ - যা আমাদের ভাবায় সিনেমা শেষ করার পরেও এবং যে ঘটনাগুলোর সাথে আমরা আশেপাশের মিল খুঁজে পাই - সেই নিওরিয়্যালিজমের ঠাস বুনোনে তৈরী নিরন্তর নিঃসন্দেহে বাংলা সিনেমা জগতের স্বয়ং ইন্ডাস্ট্রী প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মুকুটে একটা নতুন পালক যোগ করল। এবং অনেক প্রশংসার দাবী রাখেন পরিচালক চন্দ্রাশিস রায়ও।
হেরে যাওয়া বা এসকেপ যে কোনও সুস্থ সামাজিক
রাস্তা হতে পারেনা - তা একটা লাইনে বুঝিয়েছেন পরিচালক - “ওঁর জন্যেই ঘরে
ফেরা আবার ওঁর জন্যই ঘর ছাড়া”। এ যেন রবিঠাকুরের “নতুন করে পাবো বলে হারাই
ক্ষণে ক্ষণ” লাইনটাকে নতুনভাবে সামনে তুলে ধরে আমাদের। আমরা সবাই ভুলে
যাচ্ছি, ভুলে যেতে চাই — কিছু ঘটনা ভুলতে না পেরে অতীত আঁকড়ে কষ্ট পাচ্ছি -
আবার ভুলে গিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতকে আলিঙ্গন করলেও অপমান করছি সেই সুন্দর
অতীতকে - এই সবের দোলাচলে তৈরী 'নিরন্তর'।
একটা সুন্দর মুহুর্ত তৈরী করে তাকে ভেঙে ফেলা এবং সেই ভাঙার পিছনে সুন্দর বয়ান তৈরী - অসাধারণ দক্ষতায় করেছেন পরিচালক। যেমন একসময় শীতের রোদে পিঠ লাগিয়ে বাড়ির পুরোনো বই, গ্রামোফোন রেকর্ড, প্রিয় ক্যামেরা পরিষ্কার করে রেসিপি দেখে রান্না করলেন যাঁর জন্য সে-ই প্রিয় মানুষটা সেই খাবার খেলেন না - সেই কষ্ট ছুঁয়ে যায় দর্শকের মনকেও - কিন্তু সেই কষ্ট কোনও ঘৃণাবোধের জন্ম দেয় না। এ যেন এক সহজ সত্যি।
"A really very well planned program"-ও প্রকৃতির নিয়মের কাছে
কতটা অসহায়। আমাদের দায়িত্ববোধের priorityটা ঠিক কি? নতুন চাকরীতে
নিজেকে প্রমাণ নাকি স্ত্রীর পাশে থেকে সন্তানের প্রথমবার মুখ দেখা?
দিশাহীন নতুন প্রজন্মকে এভাবেই বারবার আত্মসমালোচনার মুখে ফেলেছে এই সিনেমা
যখন সেন বাবু বলেন “যোগাযোগ না থাকার কষ্টটা তো বোঝো না - তাই ওটাকে
রেসপেক্ট করতে পারো না”।
এরকম অজস্র অনুভূতির সমাহার 'নিরন্তর’কে
একটা কমপ্লিট সিনেমা হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। তাই দেরি না করে জি-ফাইভে
এখনই দেখে ফেলুন ছবিটা। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রজন্মকেই ছুঁয়ে যাবে এই সিনেমা।
রেটিং- ৪.৫/৫
No comments