করিশ্মা কি করিশ্মা
গত কাল জন্মদিন গিয়েছে লোলো কাপুরের। তাহলে আজ কেন তাঁকে নিয়ে এই লেখা লিখছি ? আসলে কোনো উপলক্ষ্যে কিছু লেখা আমার বরাবরের না পসন্দ। তার উপর আবার করিশ্মা কাপুরের মত ব্যতিক্রমী মানুষ। তাঁকে নিয়ে লিখতে গেলে আবার তাঁর-ই জন্মদিনের উপলক্ষ্য লাগবে কেন শুনি ? এ তো অনেকটা গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজোর মত শোনাচ্ছে।
করিশ্মা কাপুর ----- বনেদী কাপুর পরিবারের এক উত্তরাধিকারী। আবার তিনি ভেঙ্গেছেন বার বার বনেদিয়ানার খোলস নিজের ব্যবহার দিয়ে , অভিনয় দিয়ে। ম্যানারিজম ভেঙ্গে বারং বার বেরিয়ে এসেছেন। খুব বেশি ছবিতে হয়ত লোলো অভিনয় করেননি। যেগুলোতে করেছেন তার মধ্যেও কিছু কিছু ছবিতে তাঁর অভিনয় হয়েছে সমালোচিত। ওই
তো বাপ দাদার নাম ভাঙিয়ে খাচ্ছে। আফটার অল কাপুর খানদানের লেড়কি না , রাজ কাপুরের নাতনি বলে কথা। লোলোর কানেও গিয়েছে কথাগুলো। তিনি কিন্তু নিন্দুকে কি না বলে সে সব উড়িয়ে দেননি। উপযুক্ত উত্তর দিয়েছেন নিজের অভিনয় দিয়ে।
'হিরো নম্বর ওয়ান ' ছবিতে আমরা যে প্রানচঞ্চল তরুনীকে দেখি , তাঁকেই আমরা দেখি 'ফিজা ' ছবিতে এক সংযত , ঠান্ডা মাথার তরুনীর চরিত্রে। যাঁর নিজের সুখ , নিজের ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো সে বহুদিন জলাঞ্জলি দিয়ে দিয়েছে সাংসারিক প্রয়োজনের কাছে। সংসারের জোয়াল কাঁধে তুলে নিয়েছে। নিরুদিষ্ট ভাইকে খুঁজতে জগত সংসার এক করে দিয়েছে। ভাগ্যের পরিহাস এমন-ই যে সেই ভাইকে সমাজের চাপে সে নিজের হাতে গুলি করে মুক্তি দিয়েছে ভাইয়ের-ই ইচ্ছেতে। মায়ের আত্মহত্যা আর ভাইকে মুক্তি দেওয়ার চাপ নিতে পারেনি ফিজার মন। তাই অবশেষে তাঁর ঠিকানা উন্মাদ আশ্রম।
'জুবেদা' ছবির কথায় ধরা যাক না কেন। খানদানি মুসলিম ঘরের এক কন্যে। যার প্রথম সাদির পর আবার নিকাহ হলো। এবার এক হিন্দু রাজার কুমার। যদিও সেখানে সে
নিজের শিশুসন্তানকে নিয়ে যেতে পারল না। আপাতদৃষ্টিতে জুবেদা চরম স্বার্থপর , আত্মকেন্দ্রিক-ও বটে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সব কিছু ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে জুবেদার প্রেম , তাঁর আবেগ। যার কাছে রাজপরিবারের আভিজাত্য ফিকে। প্রেম ছাড়া আর
সব কিছু ঠুনকো। তাই তো নিজের প্রেমের অপমান সহ্য করতে পারেনি জুবেদা। আবার রাজার কুমারকে ছেড়েও সে থাকতে পারবেনা। তাই তাঁকে সঙ্গে নিয়েই স্বেচ্ছা মৃত্যু। সতিনকাঁটা থাক , তাতে ক্ষতি নেই। কিন্তু তা বলে নিজের প্রেমের এতটুকু অসম্মান মেনে নেয় নি। আর এখানেই জুবেদার অভিনবত্ব। প্রয়োজনে দেওরের মাতলামির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেও দ্বিধা করেনি সে।
আবার 'হাম সাথ সাথ হ্যায় ' ছবিতে তাঁকে দেখি এক আদুরে চুলবুলি মেয়ের ভূমিকায়। যে
রাঁধে সে চুলও বাঁধে। এক
দিকে সমবয়সী বা অল্প বড়দের সঙ্গে মজায় মেতে উঠতে তার জুড়ি মেলে ভার। আবার ঘর সংসারের কাজেও দড়। পরিবারের প্রয়োজনে কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সে কোনো বছর অংশগ্রহণ করে না। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আত্মীয়দের পাশে দাঁড়ায় সে।
এমনটাই লোলোর অভিনয়্প্রতিভা। ব্যতিক্রমী। যেমন কর্মজগতে তেমন ব্যক্তিগত জীবনেও তাই তো কোনো ছবির শুটিং-এ নায়কের সঙ্গে নায়িকারা শিকারে গেলেও লোলো কিন্তু যান না। হোটেলের ঘরে বসে বই পড়েন, টিভি দেখেন। নিজের মত নিজে থাকেন। নিজের সঙ্গে নিজে সময় কাটান।
ঠাকুরদা রাজ কাপুর আদর করে ডল বলে ডাকতেন নাতনিকে। সেই ছোট ডল
আজ অনেক পরিণত। অভিনয় ছাড়াও আজ
তাঁর সঙ্গী পরিবার , দুই সন্তান। বিবাহবিচ্ছেদের পরেও মনোবলে এতটুকু চিড় ধরেনি মেয়ের। শক্ত হাতে বাস্তবের মোকাবিলা করে চলেছেন। নিজের জীবনের গতিপথ নিজেই নির্বাচন করেন। সব মিলিয়ে করিশ্মা কি করিশ্মা লাজবাব।
লিখলেন ময়ুমী গুপ্ত