ভালবাসা কারে কয়
আর
কদিন বাদেই পৌষ সংক্রান্তি। জমিয়ে শীত পড়েছে।
আর কৈলাসে তো সারা বছরই শীত। সেখানে তো আর
কথাই নেই। হাড় কাঁপানো শীত। তার-ই মধ্যে শিব ঠাকুরের মুহুমুহু অর্ডার , কই রে নন্দী ভাঙ-তা রেডি হলো। আরে এই ঠান্ডাতেই তো ভাঙ খাওয়ার মজাই আলাদা। ওদিকে নন্দী তো হিমশিম খাচ্ছে।
এদিকে পার্বতী মা কটমট করে স্বামীর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।
আর মনে মনে গজগজ করছেন। আমাকে দেখি আজকাল উনি পাত্তাই দেন না। আবার সতীর মত বেশ কয়েক কল্প দুরে না থাকলে শিক্ষা
হবে না দেখছি। আমি পাশে এসে বসলাম। আর আমার সঙ্গে একটু গল্প করা তো দুরে থাক , আমার
দিকে একটু তাকানোর ফুরসত-ও নেই। ভাঙ খাওয়াটাই বড় হলো মহাদেবের।
তা
পার্বতী মায়ের রাগ করাটা ভুল তো কিছু নয়। বরাবর শিব ঠাকুরের আপনভোলা স্বভাবের জন্য
নাজেহাল হতে হয়েছে তাঁকে। প্রথমে পার্বতী মা একটু রেগে যান বটে। কিন্তু শিবের মুখের
দিকে তাকালেই সব রাগ নিমেষে জল হয়ে যায় উমার। শিবের জন্য মা মেনকার কাছে কম কথা শুনতে
হয় উমাকে ? কিন্তু সব থেকে বড় কথা পার্বতীকে যে শিব বড় ভালবাসেন। আর এই ভালবাসার কাছে যে সব-ই তুচ্ছ। যতবার মহাদেবের
থেকে পার্বতী মাকে দুরে যেতে হয়েছে ততবার কি শিব
কম কষ্ট পেয়েছেন !আর মহামায়া-ই কি পারেন
দেবাদিদেবকে ছেড়ে থাকতে ?
কিন্তু
এখন আর আমাকে বোধহয় ভোলানাথ আর ভালবাসেন না।
ভাবতেই চোখে জল আসে উমার। মুখ গম্ভীর
করে উঠে যান তিনি। বসেন মানস সরোবরের তীরে।
পুরনো কথা চিন্তা করে উমার ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি খেলে যায়। পরক্ষনেই গম্ভীর হয়ে যান
তিনি। মনটা ভার হয়ে ওঠে। কতদিন আমাকে উনি কোনো
উপহার দেন না। একটা শাঁখা-ও কি দিতে পারেন
না ! নিদেনপক্ষে একগাছা পারিজাত ফুলের মালা ! যাক গে দিতে হবে না কিছু আমাকে। অভিমানে মুখ লাল হয়ে ওঠে উমার।
ওদিকে
যাকে নিয়ে এত কান্ড সেই শিবের মুখে কিন্তু
মুচকি হাসি। এদিকে উমাকে পাশ থেকে উঠে যেতে দেখে মনে মনে প্রমাদ গোনেন তিনি। আবার মনটা খুশিও। কে বলে বিয়ের বেশি দিন পর ভালবাসা কমে যায়। আজ -ও আমার মনোযোগ না পেলে উমার মুখটা অভিমানে গোলাপী
হয়ে ওঠে। আর তাই দেখে শিব ঠাকুর পার্বতী মা
কে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলেন।
ধীরে ধীরে এসে
শিব বসেন উমার পাশটিতে। কি গো উঠে এলে যে। আজকাল আর আমার পাশে বসতে ভালো লাগে না বুঝি।
উমা কোনো উত্তর দেন না। শিব তাও কথা
বলেই চলেন। উমা ভাবেন ভাঙ হয়ত শেষ হয়ে গিয়েছে।
তাই এতক্ষণে আমার কথা মনে পড়েছে। এদিকে
কথার মাঝে মাথায় স্বামীর হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘাড় ঘোরাতে যেতেই শিবের মৃদু বাধা উহু দাঁড়াও
, এক মিনিট। মাথায় পারিজাত ফুলের মালা পরিয়ে
মহেশ্বর টেনে নেন ঘরনীর হাত। এবারে উমার হাতে একজোড়া শাঁখা হাতে পরিয়ে দেন তাঁর শিব।
আনন্দে উমার বাক্যস্ফুর্তি হচ্ছে না। সবশেষে একটা হাল ফ্যাশনের প্যাকেট। নাও এটা
তোমার জন্য। এত কি ? আহা খুলেই দেখো না।
পার্বতী মায়ের তো চক্ষু চড়কগাছ। এ কি
এতো ফিরহন।
এক
গাল হেসে শিব বলেন আহা , এত শীত। তোমার বুঝি
কষ্ট হয় না ! যতই হিমালয়ের মেয়ে হও, কৈলাসে বড় বেশি ঠান্ডা পড়েছে। তার উপর তোমার জন্মদিন বলে কথা। আমার বুঝি তোমাকে
কিছু দিতে ইচ্ছে হয় না ! কদিন আগে মর্তে গিয়ে এটাই নিউ মার্কেটে দেখেছিলে না ! কেমন
চমকে দিলাম। ভাবতেই পারোনি তো !
উমার
মুখে কোনো কথা যোগায় না। শুধু শিবের গলা জড়িয়ে
ধরে বলেন থাঙ্কু। আর শিব বলেন , হ্যাপি বার্থডে
টু ইউ। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ উমা।
[মা দুর্গার আবির্ভাব তিথি অনুসারে এই লেখাটি লিখিত নয়। এমনকি ভারতীয় পুরাণকে কোনভাবে অসম্মান করার উদ্দেশ্য আমাদের নেই। এটি নিছক কল্পকাহিনী। আমরা চিরন্তন প্রেমিক-প্রেমিকা হিসেবে রাধা-কৃষ্ণের কথায় বেশিরভাগ সময়ে বলে থাকি। তা শিব-পার্বতী-ই বা কম কিসে ? ]
লিখলেন ময়ুমী গুপ্ত