চোরাবালি
১
একটা
অদ্ভুত যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে কাটছে জীবনটা। রণর বিদেশ যাওয়াটাকে প্রশ্রয় দিয়ে
বোধয় ভুলই করেছিলাম। তাই আজ আর সেই বাহান্ন তাশের রঙ-মিলান্তি আমার ধুসর মনটাকে
জাঁকিয়ে ধরেনা। সব যেন unsolved হয়েই
রয়ে গেল। level
of difficulty-টা যদিও বেড়েই চলেছে। একটা সময় ছিল,যখন হাতে pastel জুটল
কিনা ওমনি শুরু হত কল্পনার কারসাজি। তখন আকাশ আর সমুদ্রের রঙের কোন ফারাক ছিলনা।
দুটোই বেশ নীল দিয়ে ভরিয়ে দিতাম। এখন যন্ত্রণাগুলোর মত রঙগুলোও কেমন সাজতে শিখেছে।
কোনটা হালকা, কোনটা গাঢ়,কোনটা গভীর তো কোনটা আপ্লুত। ভালই তো। রং-বর্ণ এসবের ফারাক থাকলেই বোধয়
যন্ত্রণাগুলোকে আলাদা করে চেনা যায়। সত্যি! রণর বিদেশ যাওয়াটা approve করা ঠিক হয়নি।
Company তে এখন appraisal এর রমরমা। সবাই
তাই আমার কাছে এসে নিজেকে ‘চিনিয়ে’ যায়।
ফরমাইসেরও শেষ নেই। আজকালকার ছেলেমেয়েদের নিজেদের চেনানোর তাগিদটা এত বেশি
না! ভাবলে অবাক লাগে! আর সেই জন্যেই তো reality show গুলোর এত দম্ভ।
মানে TRP আর কি! কেউ
বোঝেই না-সবাই তো আর ‘5’ হতে
পারেনা। কাউকে তো ‘3’ বা ‘4’ ও পেতে
হয়। কি যে করি-ওদের আশাভরা মুখগুলো মনে পড়লেই কষ্ট হয়। তার চাইতে spider solitaire- ই ভালো। এরম করে
রণও এসেছিল একদিন ‘onsite’ এর ফরমাইশ নিয়ে। ওর বায়নাটা না রেখে
পারিনি। আর সেদিন থেকেই যেন রঙগুলো বেমালুম অগোছালো হয়ে গেল।
২
সেদিন
সুখবরটা দেব বলে সন্ধ্যেবেলা besantnagar beach-এ
অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম রণ-র। ওর আসতে দেরি হচ্ছে দেখে বালির ওপর বসে
ঘর বানাতে শুরু করলাম। হঠাৎ এক ভদ্রমহিলা হাতে একটা ছোট্ট
লাঠি আর কোমরে একটা পুটলি নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো । কি একটা বিড়বিড় করে
বলল। গত ছয় বছরের আমার চেন্নাই জীবনে কোনদিন এই অদ্ভুত ভাষাটা শেখার ইচ্ছেই
হয়নি। প্রত্যেকবারই মনে হত জিভ ছিঁড়ে যাবে। ভদ্রমহিলাকে দেখেই বুঝলাম ও ভবিষ্যৎ
গণনা করে। হাতের রেখায় তৈরি modern art বুঝে ফেলতে
পারে! ওকে কোনোক্রমে ‘ইল্লে ইল্লে’ বলে বারণ করে দিলাম। ওনার একরাশ
বিরক্তি ছুড়ে চলে যেতেই একটা ঢেউ ঝাপটে পড়ল আমার ওপর। চুড়িদারটা ভিজল ঠিকই,তবে ঘরটা ভেঙ্গে দিয়ে চলে গেল পাষাণ ঢেউটা।
যারা বলেন- সমুদ্র কিছুই নেয়না,যা নেয়
সব ফিরিয়ে দেয়-তারা আসল কথাটা জানেননা। সমুদ্র ইচ্ছে মত নেয় আর ইচ্ছে মত
ফিরিয়ে দেয়।
একটু সরে এসে
বসলাম। অন্য কোনদিন হলে রাগে গজগজ করতাম। কিন্তু সেদিন সুখবরটা দিতে হত রণ-কে ।
তাই ভিজে যাওয়ার রাগ আর ঘর ভাঙ্গার যন্ত্রণা ঝেড়ে-মুছে আবার অপেক্ষা করতে
লাগলাম। ষোলবার call করার
পরও যখন রণ ফোন তুলল না ,তখন একটা sms করে
জানালাম যে এবার ফিরতে হবে। auto stand এর দিকে পা বাড়াতেই
রণ-র ফোন। পনেরো মিনিটেই নাকি আসবে। beach পেরিয়ে রাস্তা cross করে মুখোমুখি barista-র
দোতালায় গিয়ে বসলাম।
৩
রণ ১৫
মিনিটের জায়গায় আমাকে আধ-ঘন্টা wait করিয়ে finally এল।
রাগে-অভিমানে আমার সর্বাঙ্গ জ্বালা ধরেছিল ঠিকই কিন্তু ওর কাঁচুমাচু মুখটা দেখে হেসেই
ফেললাম। কায়দা করে ছেলেটা আবার ফুল এনেছে! একতলায় order place করেই এসেছিল।
নিজের জন্য একটা strong
coffee, আমার
জন্য chocolate
brownie । দু-চার
কথা শুরু হতেই সেগুলো নিয়ে এল একটা কালো কুচকুচে ছেলে। barista-র একটা
দেওয়াল পুরোটা কাঁচের। বাইরে একটা সুন্দর কালো পীচের রাস্তা। রাস্তার ওইপাড়ে
বাঁধানো beach শুরু হয়েছে।
যতদূর street
light-এর আলো পরেছে ততটা শুধুই বালির ওপর কপোত-কপোতীদের দল। তারপর
ঘন কালো অন্ধকার। আজও সমুদ্র আর আকাশের রঙ এক। কালো…শুধুই
কালো। হঠাৎ আচমকা একবার বিদ্যুৎ ঝলসে উঠল আকাশে।
বুঝলাম খুব বৃষ্টি হবে আজ। ঠিক তক্ষুনি বুক উজাড় করে আকাশ
বৃষ্টি নামাল।
কাঁচের
দেওয়ালে ঝুরোঝুরো বৃষ্টিগুড়ো…
একফোঁটা-চারফোঁটায়
আঁচল ভরে ঝিনুক কুড়ো…
এলোমেলো
চুলে আঙ্গুলের আঁকিবুঁকি…
তোর
বুকে চোখভেজা গন্ধ শুঁকি…
ইচ্ছে
করল ছুটে চলে যাই…চারদিকের স্নিগ্ধতা মেখে আমিও রণকে জড়িয়ে ধরি। রণ ওর
সমস্ত উষ্ণতা দিয়ে আগলে নিক আমায় নিজের বুকের ভেতর…ডুবিয়ে
দিক গরম ঠোঁট দুটো। আজ সমুদ্র গর্জাক…যত
ইচ্ছে গর্জাক…
৪
-“সোম….এই সোম…কোথায়
হারিয়ে গেছিস??”
কাঁচের
বাইরে সমুদ্রকে ওর মতই ফেলে রণর দিকে দেখলাম।
-“কি রে কি হল?? অমন ফ্যাকাসে
কেন মুখটা??”
নিজেকে
সামলে আধো আধো করে বললাম-“কই? না
তো-কি যেন বলছিলি??”
-“ধুর! তুই কোন কথাই শুনলি না। ঐ যে নন্দকিশোর আর
মূর্তি-ওদের সঙ্গে meeting হল,সে ব্যাপারে কিছু বলল তোকে?? শালা ওই হারামি team আর project lead টা মাড়িয়ে দিল
সব।”
তখনই
বুঝলাম যে এই বৃষ্টি আর সমুদ্রের combinationটা
বাইরের প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্যেই ভালো। আমাদের মত company-র resource-দের
জন্য নয়। আমিও এই চক্করে আসল খবরটা দিতে বেমালুম ভুলেই গেছিলাম।
রণ আবার একটা
খিস্তি দিতে যাচ্ছিল তক্ষুনি ওর মুখ চেপে বললাম-“তুই…onsite….New
Zealand….এবার বল-খুশি????”
রণর
চোখে এর আগে কবে এত জৌলুস খেলেছিল-মনে পড়েনা। প্রথমে খুব অবাক চোখে দেখল…তারপর
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আশেপাশের অদ্ভুত দৃষ্টিগুলো
এড়িয়ে আমিও ওর পিঠে হাত রাখলাম। দক্ষিনি ছেলেমেয়েরা একটু conservative ঠিকই… তবে চোখের সামনে
এরম একটা দৃশ্য দেখলে আর কি-ই বা করত ওরা!
-“thank you thank you sooooooooo much…I love you love you..”
অন্য
কোনোদিন হলে খুব ইতস্তত করতাম। কিন্তু সেদিন নিজেদের মনের ভেতরটা উঁকি মেরে দেখলাম…আর
সাহসটা একশ গুন বেড়ে গেল। রণ আমার হাতটা টেনে সিড়ি বেয়ে রাস্তায় নামলো। আমি
প্রায় হুমড়ি খেয়ে গড়াতে যাচ্ছিলাম। বেরিয়ে দেখলাম besantnagar beach তখন ভালবাসায়
ভিজছে। ছুটতে ছুটতে একেবারে সমুদ্রে পা দিলাম।
ঢেউ
তুলেছে পেখম..
বৃষ্টি
মুকুটমণি..
চারকোলেতে
তিমির গোঁজা..
তোর
হাতে হাতছানি..
রণ একটা
ছোট্ট বাচ্চার মত এদিক-সেদিক ছুটে বেড়াতে শুরু করল। জল আছড়ে..ঢেউ-এ
মুড়ে খেলতেই থাকল। আমি দেখি আর হাসি। একমুহূর্তের জন্য রণকে ‘নিজের’ মনে হল।
গত চার বছরের ধোঁয়াশা এবার কাটবে মনে হল। ওর হাসি মানে আমার সারাদিন ভালো কাটা…ওর
মুখভার মানে আমার অন্যদের অপর রাগ বর্ষণ…চিৎকার ..চ্যাঁচামেচি..বাইকে accident -এ পা
ভাঙলে আমার দিনরাত্রি এক..দায়িত্ব নিয়ে লাঞ্চ করানো,সময়ে
সব মনে করিয়ে দেওয়া…সব যেন আমার অধিকারের দস্তাবেজে লেখা। আমারও
বেশ ভালই মনে পড়ে আজও সেই দিনটা…রণ যেদিন দিল্লী
থেকে posting পেয়ে চেন্নাই
তে এল…আমার কাছেই report করেছিল।
রণজিৎ charm এর
দায়ে ওকে একটু অন্যরকম লেগেছিল। ও খুব ভালো করেই জানত যে আমাকে ঠিকঠাক ‘পটাতে’ পারলেই
উন্নতি….অর্থাৎ কেল্লাফতে!!
আমিও বুঝতাম ও
কেন আমার সাথে বন্ধুত্ব করে,কেন ও
আমার জন্যে মাঝে মধ্যেই chocolates আনে,কারণে অকারণে সুনাম করে,coffee-র জন্যে request করে। গোঁড়ার
দিকে আমি একটু গাম্ভীর্য বজায় রেখেই চলতাম। ওকে project-এ allocate করেও রেহাই
পায়নি। phone,
massage, internal mail কোনোদিকেই
ছাড় পায়নি। হার মেনে রণ-র সঙ্গে বন্ধুত্ব করাটাই শ্রেয় বলে মনে করলাম। এই company-তে ৬
বছরের অভিজ্ঞতা আমার। যদিও বয়সের ফারাক ছিল ৮ বছর। generally আমার category-র
লোকেরা বাকি employee-দের
ভালো বন্ধু হয়না। কারণ RMG(Resource Management Group)
–দের কাজ হল শুধু resource allocate করা। অর্থাৎ
লোককে কাজ দেওয়া rather “দয়া
করা”!! company-তে
আমাদের খুব সম্মান! (পিঠ পেছনে লোকেদের মন্তব্য ছেড়ে!!)।
রণ ছিল সবার
থেকে আলাদা। প্রচন্ড smart, dashing with excellent
intelligence। তাড়াহুড়ো করে ওকেallocate করেছিলাম support-এ।
কিন্তু ওর boss আমাকে বললেন ওকে high profile client
site-এ পাঠাবে। কথামত তাই হল। Ambattur ছেড়ে posting হল tiruvanmiyur
station এর কাছে tidal park-এ। এরপর
কেটে গেল চার বছর। রণ-র increment-এর সাথে
সাথে আমাদের Outing
–টাও বাড়তে লাগল। কখনো light house- এর সামনে
সন্ধ্যেবেলা বসে আড্ডা, তো কখনো tiruvanmiyur beach –এ বসে sunset –এর
আমেজ। কখনো express avenue-তে shopping তো কখনো Zitoon-এ delicate Arabic food। কখন যে formal English- এর relationship-টা
বাংলার “তুই ”-তে নেমে
এল….. টেরই পেলাম না।
রণ-র মধ্যে
অদ্ভুত একটা stud-type ব্যাপার ছিল।
কোনকিছুকেই যেন তোয়াক্কা করত না। এখনও মনে পড়ে সেই দিনটা। শনিবার…বাড়িতে
পড়ে পড়ে ল্যাদ খাচ্ছি। হঠাৎ কোথা থেকে একটা open hood
jeep ভাড়া
করে নিয়ে এসে calling
bell বাজিয়ে
বাজিয়ে বিরক্ত করে মারল। বেরিয়ে দেখি ছেলে সাদা-সবুজ চেক হাফশার্ট আর ডেনিম
গলিয়ে দাঁড়িয়ে। sunglass –টা বুকে
ঝোলানো। চুলগুলো এলোমেলো।
মুচকি
হেসে বললাম-“কি রে? সক্কাল
সক্কাল বিরক্ত না করে কি পারছিলিস না???”
বুক
থেকে চশমাটা বের করে পরিষ্কার করতে করতে বলল-“ল্যাদখোর…..১ ঘন্টা
সময় দিলাম। get
ready….we’rgoin to MAHABALIPURAM….এই রোজ রোজ একই marina
beach….besantnagar beach আর
পোষাচ্ছে না।”
ভেবে
দেখলাম trip টা মন্দ নয়।
যেতে max 2
hrs…..তারপর সারাদিন জলে!! Ready হতে ১ঘন্টা লাগল
না। বেড়িয়ে পরলাম আকাশি নীল রঙের কুর্তি আর সাদা রঙের হ্যারন পরে। সারা রাস্তা
পেরল হই হই করে গান গেয়ে। Mahabalipuram পৌঁছতেই দেখি
চারদিকে শুধু পুরনো মন্দির। ভাঙ্গাচোরা মন্দির গুলোর দিকে এগোতেই foreigner-দের
একটা বড় দলকে দেখলাম। বইপত্তর,camera নিয়ে গাইড সমেত
ঘুরছে। আমরাও যোগ দিলাম সেই দলে। Alen, Christine দের সাথে
বন্ধুত্ব হয়ে গেল। সেই সঙ্গে শুরু হল রণ-র হ্যাংলামি! মেয়ে দেখলেই ব্যাস! যাকগে, অনেকক্ষণ এভাবে রোদে গরমে ঘুরতে ঘুরতে
গাইডের ওপর ১ রাউন্ড চেঁচিয়েই দিলাম-“but
where is the beach????”
গাইড
কাঁচুমাচু মুখ করে বলল-“madam…wait-aa..I will show… ”
একটু
এগিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ১টা বড় গেট দেখলাম। বাইরে ১টা বড় বোর্ড। কিছু নিয়মাবলী আর
বড় বড় করে লেখা “for Indian- Rs.10 &
for Foreigners- Rs.550”!! লাইনে ১৫মিনিট
অপেক্ষা করে টিকিট কাটা হল। গেটের ভেতর ঢুকলাম। রণ আশেপাশের বাগান ছাড়িয়ে দূরে
একটা পুরনো মন্দিরের চুড়া দেখাল। রণ আমার হাতটা ধরে যতই এগিয়ে যাচ্ছিল আমার
সমস্ত কোষে কোষে শিহরণ তার ১০গুন বেগে বইছিল! প্রথম ছোঁয়া-সে এক অপূর্ব অনুভুতি…বোঝানো
দায়! বিশাল সেই শিব মন্দির হাজার বছর পুরনো,গায়ে
হাতি-মানুষ বিভিন্ন কারুকার্য,নকশা
করা। মন্দিরটা দেখতে রথের মত। ভিড় ঠেলে ঘুরে ঘুরে পুরোটা দেখার পর গাইড আমাদের
নিয়ে গেল শেষ boundary-র কাছে।
তারপর যা দেখলাম মনে পড়লে এখনও গায়ে কাঁটা দেয়। আবিষ্কার করলাম আমরা সেই
মুহূর্তে পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে...আর চারদিকে গাঢ়
নীল রঙের সমুদ্র বিছিয়ে পড়ে আছে। যতদূর চোখ যায় শুধুই সমুদ্র। সেদিনও আকাশ আর
সমুদ্রের রঙ একদম এক। গাঢ় নীল। কোথায় যে সমুদ্রের শেষ…আকাশের
শুরু… খুজে
পেলামনা….মনে হল শুধু যেন বয়ে গেলাম। রণর হাতটা শক্ত করে ধরলাম।
অচেনা
সাগর…তোর নাম কি??
আমাকে
ভাসা…
গভীরে
তলিয়ে যাই..
আমি
পরিযায়ী, তাতে ক্ষতি কি??
দু-ফোটা
তৃষ্ণার মরণে,
পাতালে
সাঁতরে যাই…
অচেনা
সাগর…তোর নাম দি….”পিয়াসী”।
সেদিন
বাড়ি ফিরে রণকে ফিরতে দিইনি…আটকে দিয়েছিলাম… শুধু
সম্পর্কটাকে আরেকটু গভীরে যেতে আটকাতে পারিনি….
৫
রণর
সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক ছিল ঠিকই…কিন্তু
মিলনকালে কখনও ভালবাসার দাবিটা অধিকারের রূপ নেয়নি। যখন চাহিদা ছিল তখন দুজনই একে
অপরকে পাশে পেয়েছি। তবে তথাকথিত ভালবাসা,প্রেমের
সম্পর্ক- এসব ছাড়িয়ে অনেক দূরে আমরা আমাদের পৃথিবীটাকে দিগন্ত বিস্তৃত করেছিলাম।
হয়তো সেটাই ঠিক বলে মনে করেছিলাম। বস্তাপচা প্রেম-society-সংসারের concept ছাড়িয়ে
বহুদূরে সম্পর্কটা বয়ে গেছিল।
বিয়ে
করিনি। মনের অগোচরে চারটে বছর কেটে গেল। ফোনের ওপারে থেকেও মা যেন সব বুঝত। তাই
হয়তো আমাকে বিয়ে করার কথা একবারও বলেনি। চিন্তাই পরলাম সেদিন যেদিন রণর on-site যাওয়াটা পাকা
হয়ে গেল।এত বছর পর সমস্ত লজ্জা মুছে মা এর সঙ্গে ফোনে খুব কাঁদলাম। এতদিন সব যেন by default মনে হত। ওর দূরে
চলে যাওয়ার কথাটা আমি গলা দিয়ে ঠিক নামাতে পারিনি। মা খুব সাহস দিল সেদিন। ফোনের
ওপারেও কান্না লুকোবার অসীম চেষ্টা চলছিল…..ঠিক টের
পেয়েছিলাম।
আমিও
ভীষণ professional। নিজের
জীবনে উন্নতির চাবিকাঠি নিজের হাতেই থাকে –এটা
ভালো করেই বুঝতাম। ওর মুখ চেয়ে সবটা মেনে নিলাম।
৬
Besant
nagarbeach ক্রমশ খালি হয়ে আসছে। ১১টা বাজতে যায়।
-“সোম….এই সোম…কি এত
ভাবিস বলত??”
রণর
কাঁধে হাত রেখে বললাম-“দেখো…আবার
মেমসাহেবদের পাল্লায় পড়ে career টাকে ধ্বংস
করোনা যেন!”
রণ
একগাল হেসে বলল-“strip club –অবধিই
ঠিক আছে ওরা। তার বেশি নয়। আর তুই কি? আমি
গেলেই তো ব্যাস! একটা হাবাগোবা typical বাঙালী
ছেলে দেখে বিয়ে করে নিবি! হু! আমাকে বলতে আসে।”
মুখ
বেঁকিয়ে বললাম-“বারে! তোর জন্য অপেক্ষা করে থাকব নাকি
সারাজীবন??!!”
-“অপেক্ষা কেন করবি?? আমার সাথে যাবি। অনেক কাজ করলি।
এমনিতেই অনেকখানি বুড়ি হলি,আর হতে
হবেনা!!”
অভিমানের
সুরে বললাম-“আমি যাবনা। তোকে পাঠাচ্ছে,তুই যা। আমি এখানেই থাকব। একটা south Indian ছেলের সাথে
প্রেম করব।”
-“এই বয়সে?! হা হা
হা!!”
-“হ্যাঁ রে! আর এমনিতেও ওরা ভীষণ mature! তোর মত নয়।
পাতি engineer!!”
-“তার মানে আমি immature???ভালো।
তোর বিয়ের card পাঠাস। নামের
পাশে লেখা থাকবে b.tech
engineer in Computer science……MBA in HR…RMG head!!!!! বিয়ের কার্ড তো
নয়,biodata হবে তোর
ওটা!”
-“সে হলে হবে!!তবে তোর মত পুচকে তো হবেনা!!” –বলেই দৌড় দিলাম।
-“এই সোম…দাঁড়া
তোকে দেখছি…”
-“হা হা হা!!”
Besant
nagar beach-এ এখন শুধুই ভাললাগার বৃষ্টি …সমুদ্রের
খেলা…বালিতে ছোট্ট ছোট্ট ভালবাসার ঘর আর এলোমেলো হাসি….
৭
রণ এখন new Zealand-এ। রোজই
প্রায় mail করে। ছবিও দেয় facebook এ। strawberry…burger…bear
bar…strip club…সব গল্পই শুনি। কষ্ট তো হয়ই definitely। হাসি, কাঁদি, রাগ করি
আবার কখনো কখনো কোমর বেঁধে ঝগড়াও ভালবাসার দাবি টুকু বাদ দিয়ে! আর ঠিক এভাবেই
তুমি
যখন আকাশ ছুঁয়ে চল
উড়ে
উড়ে ঘুরে ঘুরে, জল-স্থলও
হার
মানে,ইচ্ছে ডানার ইস্তেহারে রঙ মাখায়….
তুমি
যখন মেঘের দেশে একফোঁটা বরফে হাসো
আমি
তখনও “রোদবৃষ্টিতে হেঁটে যাই”…….
---------------------------------- লিখলেন সঙ্গীতা