শুধু তুমি প্রেমিক থেকো
কৈলাসে চিন্তার ঘনঘটা
কালিপুজো কড়া নাড়ছে দোরগোড়ায়। রাত পোহালেই ভুত্চতুর্দশী। আর পুজো যত
এগোচ্ছে, শিব ঠাকুরের কপালে ততই ভাঁজ পড়ছে। কালিপুজো উপলক্ষে মাকে আই মিন মা দুর্গাকে কদিন মর্তে আসতে হয় , থাকতেও হয়। সেই নিয়ে মন-খারাপ তো আছেই। কিন্তু তার থেকে বেশি রয়েছে চিন্তা। ছেলে-মেয়েরাও বোঝে যে মাকে নিয়ে বাবা খুব চিন্তিত।
কেন যে গৌরী কালী রূপ ধারণ করেছিলেন ? চন্দ্রশেখর ভাবেন মনে মনে। সেই কবেকার ঘটনা , তার জের চলছে এখনো। মরজগতের লোকজনরা যে এত মা কালী মা কালী করে। কিন্তু তারা কি আসল ব্যাপারটা খতিয়ে দেখে না ? এদিকে মায়ের সন্তান আর মায়ের কষ্টটাই বোঝে না। আশ্চর্য লাগে ভোলানাথের।
মা
কালী তো পার্বতীর-ই অশান্ত রূপ। আর সেই অশান্ত রূপের আবাহন করলে তো উমাকে আজ-ও কালী রূপ ধরতেই হয়। উমা যে ভক্ত-অন্ত প্রাণ। না ওরা সবাই আমার কালী রূপের পূজা করছে। দেখো আমাকে তো
একটিবার সেখানে যেতেই হয়। নাহলে কি আমার মান থাকে না তোমার থাকে ? এদিকে উমা কি বোঝেন না
যে তাঁর কষ্টের জন্যই স্বামীর এসব বলা ! সবই বোঝেন। কিন্তু ওই যে
জগজ্জননী। ওখানেই হয়েছে মুশকিল। আবার শিবকে সান্তনা দিতেও ছাড়েন না। তোমাকে একটু কষ্ট করে আবার আমার পায়ের তলায় শবাকারে শয়ন করতে হবে। রাগ কর না
প্লিজ।
এই সব কথা শুনলেই শিব আরো রেগে যান। আমি কি আমার নিজের কষ্টের কথা ভাবি ? এতদিনে এই চিনলে আমাকে! রাগ করে ঠাকুর বসে থাকেন গিয়ে কৈলাসের অপর প্রান্তে।
রইলো বাকি শিবের নিজের কথা। যাঁর কাছে বহুদিন আগেই নিজেকে সমর্পণ করে বসে আছেন, তাঁর জন্য এটুকু কষ্ট তো কিছুই না ? সেসময় তো কালীকে শান্ত করতে তিনি নিজেই এই পন্থা নিয়েছিলেন। আসল চিন্তা তো
উমাকে নিয়ে। যত পুজো চলতে থাকে ততই উমার কষ্টটাও যে বাড়তে থাকে। আবার পুজো শেষ হয়ে কৈলাসে ফিরে আসবার পরেও তো উমার কষ্ট কমতে চায় না। শিবের কোলে শুয়ে-ও যে বার বার অস্থির হয়ে ওঠেন। শিব মাথায় হাত রাখতে শান্তি।
শিব তো এদিকে গাল ফুলিয়ে বসে এই সব সাত পাঁচ ভেবেই চলেছেন। হঠাত কাঁধে কার মৃদু স্পর্শ। মুখ ফেরাতেই দেখেন পার্বতী। উমার মুখে মিষ্টি হাসি। না বললেও আদ্যপুরুষ পড়তে পারলেন আদ্যাশক্তির মনের কথা। জানি আমার কষ্ট দেখে তুমি কষ্ট পাও। কষ্টের থেকেও সেইটুকুই আমার পরম প্রাপ্তি।
শিবের হাত ধরলেন উমা। শিবের মুখেও মৃদু হাসি। উঠলেন তাঁর উমার হাত ধরে।
যেতে যেতে উমার সেই কটি কথা, যা কতবার শুনেছেন। অথচ প্রতিবারই মনে হয় প্রথম শুনছি। যুগে যুগে এমনি হোক। তুমি এমন করেই আমাকে ভালোবেসো। আর
কিছুই চাই না আমার। শুধু তুমি প্রেমিক থেকো।
লিখলেন ময়ুমী গুপ্ত
No comments