হ্যাটস অফ মহাদেব -পার্বতী
কৈলাসপতি মহাদেব আর পার্বতী মা দুজনেই কৈলাসে নিজেদের মত
থাকতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা কি
আর আমাদের মানে মর্তের মানুষদের মত নিজেদের জীবন নিয়েই মাথা ঘামান ? তাঁদের তো সবদিকে নজর রাখতে হয়। আমরা মানে এই পৃথিবীর লোকজনেরা তো তাদের -ই সন্তান। সন্তানকে কষ্টে দেখে কি আর মা-বাবা ভালো থাকতে পারেন ? এ যেমন আমাদের মরলোকের সত্য, তেমন স্বর্গের-ও।
সন্তানের প্রতি মা-বাবার এই যে ভালবাসা এর অনুপ্রেরণা যে
স্বয়ং শিব-পার্বতী। সন্তানের জন্য বার বার নিজেদের চূড়ান্ত সীমায় পৌছে দিয়েছেন তাঁরা। আজ আমরা যে
ভালো আছি তার মূলে কে বা কারা ? উত্তর খুঁজতে হলে ডুব দাও পুরানকথায়।
সেই কবেকার কথা। অনেকদিন নাকি অল্প দিন। সমুদ্রমন্থন হছে জোর কদমে। একদিকে দেবতারা টানেন তো অন্যদিকে অসুরেরা। কিন্তু অমৃত ওঠার পরেও মন্থনের বিরাম নেই। ফলস্বরূপ উঠলো ভয়ানক কালকুট বিষ। সেই গরলের গন্ধেই ত্রিভুবন জ্ঞান হারালো। সৃষ্টি যে যায় যায়। এগিয়ে এলেন দেবাদিদেব মহাদেব। সৃষ্টি রক্ষার জন্য সেই গরল নিজের কন্ঠে ধারণ করলেন। বিষের জ্বালায় তাঁর কন্ঠ নীল্ হয়ে গেল। এ কাহিনী সবারই জানা। কিন্তু একবার-ও কি আমরা ভাবি যে এই গরল ধারণ করে থাকতে মহাদেবের কত কষ্টই না হয়েছে। একদিন নয় দুদিন নয়, যুগের পর যুগ। কল্পান্তর হয়ে যায়। মহাদেব কিন্তু সেই কষ্ট পেয়েই চলেছেন।কিন্তু কোনো অনুযোগ নেই। অনেক দেবতাই তো রয়েছেন। কিন্তু কজন এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছেন? না, কাউকে ছোট করছি না। কিন্তু মহাদেব একমেবাদ্বিতীয়ম। এখনকার ভাষায় বলতে গেলে হ্যাটস অফ মহাদেব।
পার্বতী মা-ই বা কম কিসে ? দশ মহাবিদ্যার এক রূপ ছিন্নমস্তা।একথা আমাদের অনেকেরই জানা। স্নান করছেন। সঙ্গে সখি জয়া-বিজয়া। সখীদের খিদে পেল। হাতের কাছে কোনো খাবার নেই। এদিকে সখীদের কষ্ট যে আর মা দেখতে পারছেন না। করুনাময়ী মা তখন নিজের মাথাটাই কেটে ফেললেন। বইল রক্তবন্যা। সেই রক্তধারা পান করে তৃপ্ত হলো সখিদ্বয়। হ্যাটস অফ মা দুর্গা। তিনি যে আমাদের সকলের মা। তাই তো সন্তানের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিতে দুবার ভাবেননি। মা কি পারেন ছেলে-মেয়েদের কষ্ট দেখতে ? তাই তো কৈলাসে শিব ঠাকুরকে রেখে প্রতি বছর ছুটে চলে আসেন আমাদের দেখতে। লাভ ইউ মা।
লিখলেন ময়ুমী গুপ্ত
No comments